শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

আপডেট
সন্তানদের প্রতারণার শিকার বাবা

সন্তানদের প্রতারণার শিকার বাবা

আনিসুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদন   : মোঃ  কাশেম আলী তালুকদার (৯২)। পুত্র ও কন্যার প্রতারণার শিকার হয়ে নিজের অজান্তেই লিখে দিয়েছেন ২.২১ একর জমি। বৃদ্ধ কাশেম আলী তালুকদার দাবী করেন তিনি জমি লিখে দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানতেননা।

তার ছেলে লাল মিয়া তালুকদার ও কন্যা আম্বিয়া বেগম ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফুলবাড়িয়া নিয়ে গিয়ে তাকে কয়েক জায়গায় স্বাক্ষর করিয়েছিলেন। বৃদ্ধ কাশেম আলী তালুকদার নিজের অজান্তেই ছেলে মেয়ের কথায় স্বাক্ষর করে লিখে দেন কোটি টাকার সম্পদ।

যা মাস সাতেক পর প্রকাশ্যে আসে ছেলে ও মেয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লিখে নেওয়া ২.২১ একর জমির কথা। অতঃপর দলিল বাতিলের দাবিতে আদালতে মামলা করেন ৯২ বছর বয়সী বৃদ্ধ কাশেম আলী তালুকদার। কাশেম আলী তালুকদার ৫ ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বাড়ি ফুলবাড়িয়া থানার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও গ্রামে। ছেলে মেয়ে সবাই বিবাহিত।

দীর্ঘদিন পূর্বে মারা গেছেন তার স্ত্রী। ছেলে মেয়েরা ঠিকমতো দেখভাল না করায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটছিল সুখে। হঠাৎ জানতে পারেন তার ছেলে লাল মিয়া তালুকদার ও কন্যা আম্বিয়া বেগম ২.২১ একর জমি লিখে নিয়েছেন তাদের নামে। প্রায় সাত মাস পর বিষয়টি জানতে পারেন কাশেম আলী তালুকদারসহ তার অন্য সন্তানেরা।

পরে আদালতে ছেলে ও মেয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করেন বৃদ্ধ বাবা। মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।

আবুল কাশেম তালুকদার বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে আমি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ছেলে লাল মিয়া তালুকদার ও মেয়ে আম্বিয়া বেগম আমাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ফুলবাড়িয়া নিয়ে যায়। কয়েক জায়গায় স্বাক্ষর / টিপসই করানোর পর ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।

আবুল কাশেম তালুকদারের ছোট ছেলে গোলাম রাব্বানী তালুকদার জানান, আমাদের বৃদ্ধ বাবাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ফুলবাড়িয়া নিয়ে গিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ২.২১ একর জমি লিখে নেন বড় ভাই লাল মিয়া তালুকদার ও বোন আম্বিয়া বেগম । বাবার সম্পদের মধ্যে রেকর্ডকৃত প্রায় সব সম্পত্তিই তারা লিখে নিয়েছে। আর যখন সম্পত্তি লিখে নেয় তখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আমি ও আমার অপর ভাইয়েরা ব্যাস্ত ছিলাম।

পরবর্তীতে ভূমি অফিস থেকে জানতে পারি আমাদের ভাই লাল মিয়া তালুকদার ও বোন আম্বিয়া মিলে ২.২১ একর জমি লিখে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাবার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের দুজনকে কোন জমি লিখে দেননি। জমি লিখে নেওয়ার কথা শুনার পর বাবা হতভম্ব হয়ে যান। এবং পরবর্তীতে দলিল বাতিলের জন্য নিজে বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে আলাদা দুটি মামলা করেন। যাহার নং ৩০১/২০২২ ও ২৩২/২০২২।

এবিষয়ে জালাল উদ্দীনের ছেলে(আবুল কাশেম তালুকদার এর নাতী) ফরহাদ হোসেন বলেন, আমার জেঠা লাল মিয়া তালুকদার ও ফুফু আম্বিয়া বেগম দাদার সাথে প্রতারণা করে ২.২১ একর জমি লিখে নিয়েছেন। এছাড়াও জেঠা পরবর্তীতে আরো ০.৪৯ একর জমি লিখে নিয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তিনি শুধু দাদার সাথে প্রতারণাই করেননি, তার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে আরো অনেকেই।

পাশাপাশি অতিতে মাদক ও নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা করতে গিয়ে হাতে নাতে আটক হয় ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশের হাতে। ঐ মামলা কিছু দিন হাজতবাস করার পর মুক্তি পান তিনি। এ বিষয়ে লাল মিয়া তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ভাইয়েরা বিভিন্ন সময় জমি বিক্রি করে আসছে। আর তাই নিজের ইচ্ছাতেই আমাদের দুই ভাই বোনকে আমাদের ভাগের অংশের জমি হিসেবে এইটুকু লিখে দেন।

আর এতে আমার অপর ভাই ও তাদের সন্তানেরা কাহালগাঁও বাজারে ১৫ টি দোকানে তালা দেওয়া সহ একটি মটর সাইকেল ভাঙচুর চালায় এবং আমার ভাগিনার দোকানে ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা করেছি। যাহার নং ৫৮৪/২০২২। আদালতে অবশ্যই আমি ন্যায় বিচার পাব।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |